উপকূল দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিসহ ৭ দফা দাবিতে ভোলায় বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালন

পিপলস নিউজ রিপোর্ট: ১২ নভেম্বর উপকূল দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, উপকূলের সুরক্ষা, অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিতসহ সাত দফা দাবিতে ভোলায় বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালিত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। কিন্তু এই ক্ষতির জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ এখনও অধরা। এমন পরিস্থিতিতে যখন ব্রাজিলের বেলেম শহরে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন—কপ৩০ চলছে, ঠিক তখনই উপকূলের সুরক্ষা ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন স্থানীয় নাগরিক ও পরিবেশকর্মীরা।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বছরের দ্বিতীয় বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার স্থানীয় মানুষজন ও তরুণ জলবায়ুকর্মীরা এই জরুরি দাবিগুলো উত্থাপন করেন।

ধর্মঘটে তারা পরিষ্কারভাবে জানান, জলবায়ু সংকট ধনী দেশগুলোর অন্যায়ের ফল, যা ভোগ করছে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো। উপকূলের ২২ শহর বড় ঝুঁকিতে, জীবন বিপন্ন ৩ কোটি।
উপকূলীয় বাংলাদেশের ২০টি জেলার প্রায় ৯ হাজার ৩৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত সংকটের মুখে।

এ ছাড়া সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২২টি শহর নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় এবং পানিসংকটের মতো মারাত্মক জলবায়ু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে উপকূলীয় মানুষের জীবন, জীবিকা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা বিপর্যস্ত হচ্ছে।
এসময় জলবায়ু বিপর্যয়ের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেন বক্তারা। গত ৫০ বছরে দেশের গড় তাপমাত্রা ১° বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ প্রতি বছর ৭–৮ মিলিমিটার হারে বাড়ছে, যা বৈশ্বিক গড়ের (৩.৭ মিলিমিটার) চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। একই সাথে উপকূলীয় অঞ্চলের ৪০% জমিতে এখন লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই হার ৭০% হতে পারে।

বাস্তুচ্যুতি বিষয়ে বক্তারা জানান, দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ সরাসরি সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির ঝুঁকিতে আছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ২০৫০ সাল নাগাদ ২ কোটি বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বক্তারা কার্বন নিঃসরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “গত ১০০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীন ৯২% কার্বন নিঃসরণ করেছে। অথচ বাংলাদেশের মতো দেশগুলো এই অন্যায্যতার শিকার। ২০৫০ সালের মধ্যে ২ কোটি বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হবে—এটি কি ন্যায়সঙ্গত?”

৭ দফা দাবিতে সোচ্চার অংশগ্রহণকারীরা

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিপূরণ সরাসরি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হাতে পৌঁছানো এবং ধনী দেশগুলোকে তাদের দায়িত্ব স্বীকার করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এই ধর্মঘট থেকে মূলত সাতটি জরুরি দাবি উত্থাপন করা হয়।

দাবিগুলো হলো:

১। উপকূলীয় অঞ্চলের সুরক্ষা, অধিকার ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
২। ১২ নভেম্বর — উপকূল দিবসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩। উপকূলীয় অঞ্চলে নদীভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বনায়ন করতে হবে।
৪। পার্বত্য ও উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ পানির স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫। উপকূলীয় অঞ্চলের নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও জলবায়ু শরণার্থীদের টেকসই পুনর্বাসনসহ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৬। বাংলাদেশকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে।
৭। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্প এবং দেশজুড়ে পরিবেশ দূষণ বন্ধ করতে হবে।

এতে ইউনিভো, সার্জ বাংলাদেশ, সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ, সিডার ইনিশিয়েটিভ, শিক্ষা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ইয়ুথ লিডিং ক্লাইমেট অ্যাকশনের যৌথ আয়োজনে এই কর্মসূচিতে স্থানীয় নাগরিক ও তরুণ পরিবেশ ও জলবায়ুকর্মীরা সংহতি জানান। তারা মনে করেন, এই পৃথিবী কোনো একক গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়, এটি সব প্রাণীর সম্মিলিত আবাসস্থল। এই আবাস ধ্বংস হলে সব উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্থহীন হয়ে পড়বে।

এমআই/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *