পিপলস নিউজ রিপোর্ট: ঢাকা-৭ আসনে বিগত সময়ে যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এভাবে বিগত সময়ে সম্পদ নষ্ট হয়েছে, সম্পদের হার কমেছে, অথচ নাগরিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারা কনভেনশন সেন্টারে ঢাকা-৭ আসনের জামায়াতের উদ্যোগে ওলামা-মাশায়েখদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী আলহাজ্ব হাফেজ মো. এনায়েত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘তাঁরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন—আমরা তা প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু গরিব মানুষের যে অবস্থা ছিল, তাই রয়ে গেছে। বরং সম্পদ নষ্ট হয়েছে, সম্পদের হার কমেছে, অথচ তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
গত ৫ আগস্টের পর দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি কমেনি মন্তব্য করে আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি দেশে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও বৈষম্য দূর করা সম্ভব। তা ছাড়া অন্য কোনো শক্তিই এসব দূর করতে পারবে না। তাই আমরা ইসলামী শক্তির প্রতি আহ্বান জানাই আপনারা সকলে মিলে সহযোগিতা করবেন।’
ঐক্যের অপরিহার্যতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো দল আছে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আমরা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছি। আর আমাদের বিরোধীরা তথা বামপন্থী ও নাস্তিকদের চাওয়া আমরা এভাবে যেন বিচ্ছিন্ন থাকি। বিচ্ছিন্ন থাকলে কোনোদিনও কামিয়াব হতে পারবো না।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, ‘আলেম-ওলামারা ক্ষমতায় আসলে সকল ধর্ম ও মানুষের অধিকার এবং সম্মান নিশ্চিতভাবে আরও বাড়বে। কারণ তাঁরা উম্মাহর রাহবার।
এ সময় ভালো মানুষ তৈরি আলেমদের অবদানের কথা তুলে ধরেন মাওলানা আব্দুল হালিম। বলেন, ‘সৎ মানুষ তৈরি করে কে? আলেমরা। নিজেরা সৎ হয়ে সৎ মানুষ তৈরি করেন। চরিত্রবান নাগরিক তৈরি করে কে? আলেমরা। কারণ একেকজন ইমাম-খতিবের বক্তব্যে মানুষ সৎ পথের দিকে পরিচালিত হয়।’
আগামী সংসদ নির্বাচনে আলেম-ওলামাদের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সত্যিকারের চরিত্রবান ব্যক্তিরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, বিশেষ করে সংসদ সদস্য হিসেবে, নির্বাচিত হতে পারেন—আপনাদের সে ভূমিকা রাখতে হবে।
‘দেখুন, ঢাকা-৭ আসনে আমাদের প্রার্থী হলেন হাফেজ আলহাজ্ব এনায়েতুল্লাহ। ‘তিনি হাফেজে কোরআন। আলহামদুলিল্লাহ, একজন হাফেজে কোরআন সংসদে যান, এটা কি আমরা চাই না? একজন শাইখুল হাদিস সংসদে যান—এটাই কি আমরা চাই না? একজন কারিউল কুরআন সংসদে যান—এটাই কি আমরা চাই না? বাংলাদেশের একটি মসজিদের খতিব সংসদ সদস্য হোন—এটা কি আমরা চাই না?—যোগ করেন মাওলানা আব্দুল হালিম।
তিনি আরও বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আগামী দিনের বাংলাদেশের পার্লামেন্টের নমুনা ভিন্ন হবে। সংসদ সদস্য হিসেবে কথা বলবেন খতিব, সংসদ সদস্য হিসেবে কথা বলবেন আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, সংসদ সদস্য হিসেবে কথা বলবেন একটি কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম। আগামী নির্বাচনে আলেমদের এ ভূমিকা ত্বরান্বিত হবেই—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘৮৫ ভাগ মুসলমানের এই দেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মুসলমান নামধারী শাসকরা ক্ষমতায় এলেও প্রকৃতপক্ষে তারা সবাই ছিল ইসলামবিদ্বেষী। বিশেষ করে বিগত ১৬ বছরে আলেম-ওলামাদের ওপর যে পরিমাণ জুলুম-নির্যাতন হয়েছে, তা বাংলাদেশের আলেম সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে।’
আমরা নিজেরাই সাক্ষী, কীভাবে আমাদের উস্তাদ শাইখুল হাদীস, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা আজিজুল হকের (রহ.) মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ফ্যাসিবাদী সরকার বছরের পর বছর জেলখানায় বন্দি রেখে নির্যাতন করেছে। এমন একজন বৃদ্ধ আলেমকে কারাগারে রেখে নির্মমভাবে নিপীড়ন করা হয়েছে।
মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.), যিনি হাজারো আলেমের ওস্তাদ—তিনিও এই ফ্যাসিবাদী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর গর্ব, আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (রহ.) শুধু জামায়াতে ইসলামী বা বাংলাদেশের নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অমূল্য সম্পদ ছিলেন। কোরআনের কথা বলার জন্য, হক কথা বলার জন্য, ইনসাফ ও ন্যায়ের বার্তা দেওয়ার জন্য, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলার কারণে তাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষীর ভিত্তিতে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আল্লামা মামুনুল হক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, যিনি আজকের তরুণদের কাছে একজন অনুকরণীয় আদর্শ বা রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।’
এ সময় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলেম-ওলামাদের মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ড. দেলোয়ার।
মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ওলামা বিভাগের সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা মোশাররফ হোসাইনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল এবং তা‘মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। সভা পরিচালনা করেন লালবাগ পূর্ব থানা আমীর ড. শামীমুল বারী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৭ আসনের পরিচালক মো. আব্দুর রহমান, চকবাজার-বংশাল জোনের সহকারী পরিচালক এস. এম. আহসান উল্লাহ, আজিমপুরস্থ হাফেজ আবদুর রাজ্জাক জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন, জাতীয় ইমাম সমাজের মহাসচিব মাওলানা মুফতি আনোয়ারুল হক, মাওলানা মুফতি আব্দুল কাইয়ুমসহ এলাকার বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-খতিবগণ।