পিপলস নিউজ রিপোর্ট: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনকে রেখে ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ কাজকে প্রাধান্য দিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ রোডম্যাপ তুলে ধরেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। এ লক্ষ্যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই রোডম্যাপে নির্বাচন পরিচালনার প্রতিটি ধাপের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথম অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে। নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জিআইএস মানচিত্র তৈরি ও প্রকাশ করা হবে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। এতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা আরও নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক খসড়া ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, যা চূড়ান্ত করা হবে ৩১ আগস্ট। এরপর ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটার তথ্য সংগ্রহ ও যাচাইয়ের কাজ চলবে। সবশেষে ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন।
নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রমও এই রোডম্যাপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আগ্রহী দলগুলোকে প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। দলগুলোর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই নিবন্ধনের চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এ ছাড়া দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা সংস্কারের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), সীমানা নির্ধারণ আইন, ভোটার তালিকা আইন, ভোটকেন্দ্র নীতিমালা, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, নির্বাচন কর্মকর্তা আইন ও কমিশন সচিবালয় আইন—সবকিছুর সংশোধনী প্রস্তাব ৩১ আগস্টের মধ্যে তৈরি করে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। এসব প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।ইসি রোডম্যাপে কারাবন্দি ও প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ, নিবন্ধন ও ট্র্যাকিং মডিউল তৈরি এবং প্রচার কার্যক্রম অক্টোবরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। নভেম্বর মাসে প্রবাসীদের কাছে ব্যালট পাঠানো হবে। কারাগারে থাকা ভোটারদের জন্য ভোটের অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, সরঞ্জাম, বাজেট ও অন্যান্য প্রস্তুতিও রোডম্যাপে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর আওতায় প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নির্বাচনী সামগ্রী সংগ্রহ, ব্যালট বাক্স প্রস্তুত, পোস্টার ও পরিচয়পত্র মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ এবং টেলিযোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত ও স্বচ্ছভাবে প্রচার ও প্রকাশের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিক ফলাফল প্রচার এবং বিভিন্ন মাধ্যমে চূড়ান্ত ফলাফল প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার পাশাপাশি সাংবাদিকদের অনুমোদনের বিষয়েও কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও সহনীয় রাখতে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্ত ও পরবর্তী সময়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করবে ইসি। এসব বৈঠকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, ভোটের দুই মাস আগে অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করা হবে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঘোষিত রোডম্যাপের প্রতিটি ধাপ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে কাজ চলছে। তাদের মতে, এসব পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।