পিপলস নিউজ রিপোর্ট: জুলাই সনদের খসড়াকে ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির দাবি, নির্বাচিত সরকারকে দুই বছরের মধ্যে এই সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবও রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে এ মন্তব্য করেন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেন, ‘এটি অসম্পূর্ণ এবং কিছু অংশ বিপজ্জনক। আজকে তারা বলছে, এটা একটা নমুনামাত্র, ভুল হয়েছে। যদি সেটাই হয়, তাহলে মন্তব্যের দরকার নেই। তবে যদি সেটাই মূল খসড়া হয়, তাহলে একে গ্রহণযোগ্য বলা যায় না।’
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলটি নিজস্ব একটি সনদের খসড়া তৈরি করছে, যা কমিশনে জমা দেওয়া হবে। তাহের বলেন, ‘সংলাপে যেসব বিষয়ে একমত হচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে।’ তিনি আইনি কাঠামো তৈরির জন্য দুটি পথের প্রস্তাব দেন—
১. অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন তৈরি করে পরবর্তীতে তা সংসদে অনুমোদন করা।
২. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই এই কাঠামো হোক কার্যকর ও আইনি ভিত্তিসম্পন্ন। না হলে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তাহের। তিনি বলেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। প্রায় সব দল এ বিষয়ে একমত, কেবল বিএনপি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।’
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। এই পাঁচজন ১২ জন সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নির্বাচন করবেন। একমত না হলে একাধিক ধাপে ভোটাভুটি—প্রথমে সাধারণ ভোট, পরে র্যাংক চয়েস ভোটিং পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় ভোটার থাকবেন মোট সাতজন—উল্লিখিত পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের একজন করে বিচারপতি। তাহের বলেন, ‘বিচারপতি দুজন যুক্ত করা হয়েছে যেন কোনো পক্ষ এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। আমরা আশা করি, বিচারপতিরা নিরপেক্ষ থাকবেন এবং হর্স ট্রেডিংয়ের সম্ভাবনা কমবে।’
তাহের জানান, বিএনপির প্রস্তাব হচ্ছে—ঐকমত্য না হলে বিষয়টি সংসদে পাঠানো হোক। তবে জামায়াতসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল মনে করে, সংসদে পাঠালে বিষয়টি অচলাবস্থার মুখে পড়বে। কারণ, সংসদে মাত্র কয়েকটি দলের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, অথচ ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ৩০টিরও বেশি দলের অংশগ্রহণ রয়েছে।
আজকের সংলাপে জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি অংশ নেয় বিএনপি, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও ৩০টি রাজনৈতিক দল।